দখিনের খবর ডেস্ক ॥ চলতি রমজানে ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারি অর্ধডজন সংস্থা তদারকি করবে। একই সাথে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে করে বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি না হয়। গত কয়েক মাসে শুধু রমজানকে কেন্দ্র করেই চাহিদার দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য দেশে আমদানি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজান উপলক্ষে আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি রমজানে ইফতারিতে বেশি ব্যবহার হয় এমন ৬টি নিত্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবি এবারই প্রথমবারের মতো সারাদেশে দ্বিগুণ পরিমাণ নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য রোজায় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সস্তায় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ এবং খেজুরের মতো ভোগ্যপণ্য পৌঁছে দেয়া। পণ্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরো রমজান মাস বাজার মনিটরিং করা হবে। জেলা পর্যায়ে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করবে জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে থানা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে। রমজানে বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া খাদ্যে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফরের বিশেষ টিম বাজার মনিটরিং করবে। ন্যায্যমূল্য ও সঠিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরও বাজারে থাকবে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাজার তদারকি করবে র্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম। তাছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটিও কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সম্প্রতি ৫ নির্দেশনা দেয়া হয়। অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থাগুলো কাজ করবে। সেজন্য চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ এবং ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এবার রমজানে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। যাতে করে স্বল্প আয়ের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পাবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। রমজানের দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবদের উদ্দেশে বলা হয়- রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। কোন নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা, ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দ্রুত মুরগি, মাছ, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ভোগ্যপণ্যের বাজারের অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নেবে তাদের এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সরকার দ্রুত জিটুজি পদ্ধতিতে সরাসরি চাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন থেকে ১০ লাখ টন চাল আনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তার পাশাপাশি বেসরকারী খাতও চাল আমদানি করবে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সম্প্রতি দ্রুত আমদানির স্বার্থে আইন সংশোধন করে। তাছাড়া বিকল্প উৎস থেকেও চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি এবং টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা। টিসিবির মাধ্যমে এবার ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্ত। সূত্র আরো জানায়, রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা এবার ৩ মাস আগে থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। সরকারী ওই পরামর্শ গ্রহণ করে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও বাজারজাতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ চাল, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, পেঁয়াজ, মসলাপাতি এবং খেজুর আমদানি করে। ইতোমধ্যে আমদানিকৃত পণ্যের বড় অংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়ে দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারে পৌঁছে গেছে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর এবং শ্যামপুর কৃষিপণ্যের মার্কেট আমদানিকৃত পণ্যে এখন ঠাসা। শুধু রোজা সামনে রেখে ২৫টি দেশ থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত ওসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, তেল, দুধ, চিনি, খেজুর, মটর, মসুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল। এবার চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় অসাধু ব্যবসায়ীদের ভোগ্যপণ্যের মূল্য কারসাজি ঠেকাতে পুরো মাসজুড়েই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ বাজার মনিটরিং শুরু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ওই লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে পুলিশকে তৎপর হতে বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরো তৎপর হবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জানান, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। দেশের আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল। তাছাড়া টিসিবিও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। আশা করা যায় রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
Leave a Reply